৫ মাস ধরে নেতৃত্বশূণ্য নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ মাস ধরে নেতৃত্ব শূণ্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার ক্রীড়াঙ্গন। ৫ আগস্টের পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়াঙ্গন নিয়ন্ত্রণকারী গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটু ও তার দোসররা। ক্রীড়াঙ্গনে হাতেগোনা দুই একজন ক্রীড়ানুরাগী ব্যতিত দেখা মিলছেনা বিগত দিনে ক্রীড়া সংস্থা ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে দাবড়ানো নেতাদের।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ৪ বছর অন্তর অন্তর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের যে গাইড লাইন আছে সে গাইড লাইন অনুযায়ী পরিচালনা করতে হয়। তবে নারায়ণগঞ্জে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় শামীম ওসমান ও তার শ্যালক যা বলতেন সেটাই বাস্তবায়ন হতো। এখানে অপরাপর ক্রীড়াবিদদের কোন ধরনের মতানৈক্য করার কোন সুযোগ ছিলনা। দীর্ঘদিন ধরেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের পদটি ছিল শামীম ওসমানের শ্যালক টিটুর নিয়ন্ত্রণে। এছাড়াও জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যারা দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেতেন তাদের বেশিরভাগই শামীম ওসমান শ্যালক টিটুর অনুগামী ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে (২০২৩-২০২৭) তানভীর আহাম্মেদ টিটুর নেতৃত্বে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। ১৭ জুন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সবাই নির্বাচিত হয়েছে। বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিতরা হলো, নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু, সহ-সভাপতি খবির আহমেদ, ইব্রাহীম চেঙ্গিস, ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিস, যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম নাসির, কার্যকরী সদস্য মাহমুদা শরীফ, আসলাম, মাহবুবুল হক উজ্জল, ফিরোজ মাহমুদ সামা, আতাউর রহমান মিলন, ডা. মো. রকিবুল ইসলাম শ্যামল, মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বিজন, আতাউর রহমান মিলন, আরাফাত রহমান, এসএম রানা।

ক্রীড়া সংস্থার মতো নারায়ণগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও ছিল তানভীর আহাম্মেদ টিটুর নিয়ন্ত্রণে। এর আগের কমিটিতে টিটু জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কথিত নির্বাচনে সাবেক জাতীয় ফুটবলার শহীদ হোসেন স্বপন সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও সহ-সভাপতি মেহেবুবুল হক তালুকদার টগর, কোষাধ্যক্ষ রবিউল হোসেন, সদস্য জসিম উদ্দিন, গোলাম গউছ, নিয়ামত উল্লাহ মিয়া, জাকির হোসেন, মোস্তফা কাওছার, আঞ্জুমান আরা আকসির, রেজাউল করিম লিটন, মাহমুদ হোসেন সুজন।

৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটুসহ অনুগামীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর মুছে ফেলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সামশুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ড। ক্রীড়া সংস্থায় ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কমিটিতে থাকা টিটুর দোসররাও আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম নাসির জানান, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ক্রীড়া সংস্থায় একটি ৭ সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ মাসেও জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এডহক কমিটি হয়নি। নতুন কমিটি না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনে একপ্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আশা করছি নতুন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেয়ার পরে ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে অচলাবস্থা দূর হবে।

উল্লেখ্য গত ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হককে বদলী করা হয়েছে।  নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে মো. তৌফিকুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার নবাগত জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান এর আগে কুষ্টিয়া জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।