নানা সমস্যায় জর্জরিত আদর্শ সরকারি বিদ্যালয়

বিভিন্ন সমস্যায় ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জের সদরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত ২৮ ও ২৯ নং নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালক ও বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর ফলে মারাত্মভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। স্কুলটির দৈন্যদশার কারণে আগামীতে বিদ্যালয়টির সুনাম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে ২৭ জন শিক্ষক এবং প্রায় ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। সুযোগ-সুবিধার অভাবে দিন দিন স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। মূলত, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে ফেলা হয়। এর ফলে তখন থেকে স্কুলটি অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়ে। নজরদারির অভাবে এরপর থেকেই স্কুলটিকে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেজা স্যাঁতসেঁতে ভবনের ছাদ ও দেয়াল। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে পড়েছে। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষে নেই লাইট ও ফ্যান। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই শোচনীয়। নামমাত্র লাইব্রেরি থাকলেও লাইব্রেরিও অধিকাংশ বই চুরি হয়ে গেছে। স্কুলটিতে নেই কোনো খেলার মাঠ। স্কুলটিতে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। রয়েছে সুপেয় পানির সমস্যা। পানির জন্য অন্যত্র ছোটাছুটি করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তাকর্মীর অভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরির ঘটনা। এককথায় বলা চলে, বর্তমানে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্কুলটি অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুলে অনেক সমস্যা রয়েছে। এর ফলে আমরা এখন ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। অনেকসময় স্কুলে বিদ্যুৎ থাকে না। ওয়াশরুম খারাপ থাকায় ওয়াশরুমে যেতে পারি না। বর্তমানে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট করতে হয় আমাদের।

অভিভাবকেরা জানান, স্কুলের অবস্থা পূর্বে ভালোই ছিল। কিন্তু কয়েকমাস ধরে অবস্থা খুবই খারাপ। আশেপাশে আরও ভালো স্কুল থাকলেও এটি সরকারি স্কুল হওয়ায় ছেলেমেয়েদের এখানে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু দিন দিন স্কুলের অবস্থা যেমন হচ্ছে বর্তমানে এখানে লেখাপড়া করানোর মতোন পরিবেশ একেবারই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই বিষয়টির সমাধানের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ভজনী রানী পাল বলেন, গত ৫ আগস্টের পর পূর্বের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দিয়ে সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই কমিটি দ্বারা স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু তদারকির অভাবে স্কুলে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার স্কুলের অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের পরামর্শে সদর থানায় একাধিকবার অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু এ থেকে কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলে থাকার সুবাধে তখন স্কুলটির দেখাশোনা করা সম্ভব হলেও পরে স্কুলটি সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, তারা বর্তমানে স্কুলের কোনো দায়িত্বে নেই। তাহলে তারা কিভাবে সহযোগিতা করবেন। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান পরিবেশে স্কুলে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা আমাদের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলটির অ্যাডহক কমিটির আহবায়ক ও সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার তাসলিমা আক্তার বলেন, এ সমস্যা সমাধানে আমি একাধিকবার স্কুলটিতে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে, আপাতত সমস্যা সমাধানে ওই এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করতে। এছাড়া স্কুলটির স্থায়ী সমাধানের জন্য খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিয়ে কি করা যেতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।