নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘ ১৫ বছর পর নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের হাত থেকে রাহুমুক্ত হয়েছে সরকারি তোলারাম কলেজ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আর দেখা যায়নি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবার পর থেকে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সহবস্থানের মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে।
অথচ আজ থেকে ৪ মাস আগেও তোলারাম কলেজে রাজনৈতিক দলগুলোর সহবস্থান তো দূরের কথা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকতেন আতঙ্কে। সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও তার গ্যাং সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে তটস্থ করে রাখতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। যেকোন দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখা হতো কলেজ প্রাঙ্গনে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোড়পূর্বক কর্মসূচি পালন ও যোগদানে বাধ্য করা হতো তাদের। কথা না শুনলে নেমে আসতো নির্যাতন।
গত কয়েকবছরে সরকারি তোলারাম কলেজ ও তার আশেপাশে একাধিক ব্যক্তিকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। ২০১৫ সালে রিয়াদের নেতৃত্বে তোলারাম কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালানো হয় ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের উপর। এতে নারীসহ অন্তত ১৫ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ।
২০১৮ সালের এপ্রিলে তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক সৌরভকে বেধড়ক মারধর করে রিয়াদ ও তার অনুসারীরা। একই বছর মারধর করা হয় যুগের চিন্তার আরেক সাংবাদিককে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গেলে মারধর করা হয় ছাত্রদল নেতা শাহজাহানকে। একই মাসে ফের মারধর করা হয় সাংবাদিক সৌরভকে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধ্যক্ষের সামনে পিটিয়ে আহত করা হয় কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আতা ই রাব্বি এবং যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। এছাড়া রূপগঞ্জ ছাত্রদলের এক কর্মীকে মারধর করে তার মোবাইল ছিনতাই করার অভিযোগও রয়েছে রিয়াদের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আজিজুল ইসলাম রাজীবসহ ৩ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে রিয়াদের বাহিনী। এসময় সংবাদ সংগ্রহকালে হেনস্থা করা হয় সাংবাদিকদেরও।
তোলারাম কলেজে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করলেও সেখানকার শিক্ষকরা কখনই বাধা দিতে পারেনি। উল্টো তোষামোদি করে গেছেন এই সন্ত্রাসীদের। কখনও কখনও সন্ত্রাসীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন শামীম ওসমানের কাছে ভালো থাকার জন্য। যা নিয়ে এখনও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বহু নির্যাতিত শিক্ষার্থী।
তবে গত ৫ আগস্টের পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের টর্চার সেল গুড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে কলেজে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও কেউ কারও কার্যক্রম হস্তক্ষেপ করছে না। বরং সহবস্থান ধরে রেখেছে পুরো ক্যাম্পাসে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘রাজনীতি করার জন্য কেউই চাপ দিচ্ছে না। যার ইচ্ছে হচ্ছে সে তার পছন্দের সংগঠনে যুক্ত হচ্ছে। আগে ছাত্রলীগ করার জন্য বাধ্য করা হতো। বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। সেই অবস্থান পরিবর্তন এসেছে। নতুন করে চালু হওয়া আবাসিক হলে সিট পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এখানে নেই কোন রাজনৈতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক প্রভাব। যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী অবস্থান করতে পারছেন হলে। আর এই পরিবর্তনই কাম্য ছিল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। যেখানে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে যুক্ত হবে রাজনীতিতে। কোন চাপ বা ভয়ভীতির মাধ্যমে নয়।’
আপনার মতামত লিখুন :